স্বদেশ ডেস্ক:
সেই ডিসেম্বরের শেষে সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। ১২ মাস ঘুরে এই ডিসেম্বরের শুরুতে টিকাদান শুরু হচ্ছে। প্রথম ইউরোপীয় রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাজ্যে আজ প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচির পত্তন হচ্ছে। ফাইজার-বায়োএনটেকের এ টিকার প্রথম দিককার ডোজগুলো পাবেন করোনায় ইউরোপে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশটির জ্যেষ্ঠ নাগরিক, স্বাস্থ্যকর্মী ও সেবকরা। টিকাটির কার্যকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বোঝার জন্য বিশ্ব চোখ রাখবে যুক্তরাজ্যের এই উদ্যোগের দিকে।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডে মঙ্গলবার থেকেই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড জানিয়েছে, এ সপ্তাহেই তারা কর্মসূচি শুরু করবে,
তবে কোন দিন তা নির্দিষ্ট করে বলেনি।
২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীন প্রথমবারের মতো জানায় যে, হুবেই প্রদেশের উহান শহরের সামুদ্রিক খাবারের একটি বাজার থেকে নিউমোনিয়াসদৃশ একটি নতুন রোগের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। নতুন করোনা ভাইরাসের সেই সংক্রমণ এর পর একে একে বিশ্বের প্রায় সব দেশে ছড়িয়ে পড়ল। বছর না ঘুরতেই কোভিড-১৯ রোগে প্রাণ হারাল অন্তত ১৫ লাখ ৪৪ হাজার মানুষ। আক্রান্ত পৌনে সাত কোটির মধ্যে সাড়ে চার কোটির বেশি মানুষ অবশ্য টিকা বা ওষুধ ছাড়াই আরোগ্য লাভ করেছেন।
করোনা মহামারী মোকাবিলায় প্রথম থেকে দেড় শতাধিক গবেষক দল টিকা ও ওষুধ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আসছিল। শীর্ষ যে কয়টি দল টিকা বানাতে পেরেছে এদের মধ্যে মার্কিন ও জার্মান ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও বায়োএনটেকের যৌথ উদ্যোগ অন্যতম। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও মার্কিন ওষুধ কোম্পানি মডার্নার টিকাও প্রয়োগের অপেক্ষায় রয়েছে।
যুক্তরাজ্য গত সপ্তাহে পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে প্রথম ফাইজারের টিকা প্রদানের ঘোষণা দেয়। সেই ঘোষণা অনুযায়ী আজ কর্মসূচিটি শুরু হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থার (এমএইচআরএ) জানিয়েছে, টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে একজনের ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। যেমন ইনজেকশন করা হবে শরীরের যে জায়গায়, সেখানে ব্যথা হতে পারে; মাথাব্যথা, মাংসপেশি ব্যথা, গিরায় ব্যথা এবং জ্বর হতে পারে।
এমএইচআরএর প্রধান জুন রেইন ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেছেন, ‘এই টিকার বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তবে দু-একদিনের মধ্যেই সেসব উপসর্গ আপনা হতেই চলে যাবে। তেমন গুরুতর কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
গত মাসে ফাইজার দাবি করে, তাদের এ টিকা শতকরা ৯৫ ভাগ কার্যকর।
টিকাটির দুটি ডোজ তিন সপ্তাহ তফাতে গ্রহণ করতে হবে। এ টিকা সংরক্ষণ করতে হবে শূন্যের নিচে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়।
চীন ও রাশিয়া ১১ আগস্ট নিজেদের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু করেছিল বলে পৃথকভাবে দাবি করেছে। সম্প্রতি দুই দেশই তাদের টিকার বাস্তবিক প্রয়োগ শুরুর দাবিও করেছে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সেভাবে পাওয়া যায় না বলে, বিশেষ করে পশ্চিমা গণমাধ্যমে বেইজিং ও মস্কোর দাবি নিয়ে সংশয় রয়েছে।